প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে ই-কমার্স সাইট নিরাপদ ডটকমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শাহরিয়ার খানকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।
রাজধানীর শান্তিনগর এলাকায় অভিযান চালিয়ে রোববার শাহরিয়ারকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানান ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম।
গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত পাঁচটি কম্পিউটার, দুটি ল্যাপটপ, দুটি হার্ড ডিস্ক, বিভিন্ন ব্যাংকের ১৩টি চেক বই, ১৩টি ডেভিড/ক্রেডিড কার্ড, ২৩টি সিম কার্ড, সার্ভারের তথ্য ও অন্যান্য কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়।
উপ-কমিশনার শরীফুল ইসলাম তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, প্রতারণার স্বীকার এক ব্যক্তির আদাবর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন। থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবি সাইবার ক্রাইম বিভাগ মামলাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে। তদন্তে যথাযথ তথ্যের ভিত্তিতে শাহরিয়ার খানকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ই-কমার্স সাইট নিরাপদ ডট কমের প্রতারণা সম্পর্কে গোয়েন্দা এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার শাহরিয়ার ২০২০ সালের আগস্ট মাসে ‘নিরাপদ ডটকম’ নামে একটি অনলাইন ভিত্তিক ই-কমার্স সাইট খুলে বিভিন্ন চটকদার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সাধারণ গ্রাহকদের আকৃষ্ট করেন। তাদের কাছ থেকে একটি পেমেন্ট গেটওয়ের (এসএসএল কমার্স) মাধ্যমে অগ্রিম অর্থ হাতিয়ে নেয়। তারা ৫০% ডিসকাউন্টে মোবাইল ফোন সেট, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ফ্রিজ, ওভেনসহ অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক্স আইটেম ৩০ দিনের মধ্যে হোম ডেলিভারি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গ্রাহকদের প্রলোভিত করে।
ডিবি পুলিশ বলছে, ‘নিরাপদ ডটকম’ এর গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার এবং ১ মাসের মধ্যে প্রায় ১২ হাজার অর্ডার পায়। যার মাধ্যমে প্রায় ৭-৮ কোটি টাকা তার ব্যাংক হিসাবে যুক্ত হয়। যারা পণ্য অর্ডার করেছেন তাদের মধ্যে বেশির ভাগই ছাত্র ও অল্প বেতনের চাকরিজীবী। প্রাথমিক অবস্থায় তারা কিছু পণ্য ডেলিভারি করে সেই গ্রাহকদের দিয়ে তাদের পেজে পজিটিভ রিভিউ পোস্ট করিয়ে সাধারণ গ্রাহকদের মধ্যে বিশ্বাস স্থাপন করে।
পরবর্তীতে অধিক সংখ্যায় অর্ডার এবং অগ্রিম অর্থ পেলে তারা পণ্য ডেলিভারি না দিয়ে গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা শুরু করে। অনেক দিন পেরিয়ে গেলে গ্রাহকরা যখন বুঝতে পারেন তারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন তখন বিভিন্ন সামাজিকমাধ্যম ও মিডিয়ার মাধ্যমে এর প্রতিকার দাবি করতে থাকেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীটি জানতে পেরেছে, গ্রাহকদের যারা চাপ প্রয়োগ করতে পেরেছেন তাদেরকে টাকা রিফান্ডের কথা বলে ব্যাংক চেক দিলেও টাকা ওঠাতে পারেননি। বারবার চেক ডিজঅনার হওয়ার অভিযোগ আসতে থাকলে প্রতারক গ্রাহকদের সাথে সকল ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায়। এ ঘটনায় অসংখ্য ভুক্তভোগীর পক্ষে ইশতিয়াক আহমেদ বাদি হয়ে আদাবর থানায় মামলা করেন।
এক প্রশ্নের উত্তরে ডিবি কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে ২ হাজারেরও বেশি ওয়েবসাইটভিত্তিক ও প্রায় এক লাখের মতো ফেসবুকভিত্তিক ই-কমার্স সাইট চলমান রয়েছে।
ডিবি পুলিশের পরামর্শ, চটকদার বিজ্ঞাপণে প্রলোভিত না হয়ে মার্কেটপ্লেস যাচাই করে পণ্য অর্ডার এবং অগ্রিম মূল্য পরিশোধের পরিবর্তে ক্যাশ অন ডেলিভারি অর্থাৎ পণ্য বুঝে পেয়ে মূল্য পরিশোধ করলে এসব প্রতারণা ও ভোগান্তি থেকে রেহাই মিলতে পারে।