Home » Blog » Tech News » টিকটকের কুপ্রভাব: কিশোরীদের অদ্ভুত আচরণ বাড়ছে

টিকটকের কুপ্রভাব: কিশোরীদের অদ্ভুত আচরণ বাড়ছে

tiktok

ইদানীংকালে কিশোরীদের মধ্যে অদ্ভুত আচরণগত পরিবর্তন আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। এই বিশেষ আচরণকে ইংরেজিতে বলে ‘টিকস’। এটি শারীরিক ও মৌখিক দুই ভাবেই প্রকাশ পেতে পারে। যেমন: অকারণে হাত পা ছোড়াছুড়ি করা, পাশের জনকে হাত বা পা দিয়ে খোঁচা দেওয়া, চিমটি কাটা, অযথা লোকজনের সামনে কারও স্পর্শকাতর অঙ্গের দিকে আপত্তিকর ইঙ্গিত করা, বারবার হাততালি দেওয়া ইত্যাদি। এ ছাড়া হঠাৎ চিৎকার করে কোনো অর্থহীন শব্দ উচ্চারণ করা যেমন: উ…হু…! বা কোনো খাবারের নাম বলা। বিশেষ করে অনলাইনে ভাইরাল কোনো খাবার। এই ধরনের আচরণকেই বলে টিকস।

টিনএজ মেয়েদের তুলনায় অল্প বয়স্ক ছেলেদের মধ্যে এই বিশেষ আচরণগত বৈশিষ্ট্য বেশি দেখা যায়। তবে কোভিড মহামারির মধ্যে বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বিস্মিত এবং হতবাক হয়ে লক্ষ্য করেছেন, কিশোরীদের মধ্যে হঠাৎ অনিয়ন্ত্রিত শারীরিক এবং মৌখিক টিকসের প্রবণতা ব্যাপকভাবে বাড়ছে। বাংলাদেশেও অল্পবয়সী মেয়েদের টিকটকে এমন অদ্ভুত অস্থির আচরণ করতে দেখা যায়।

আরও পড়ুন: সংঘবদ্ধ চক্রের দখলে ‘সুরক্ষা অ্যাপে’র নিয়ন্ত্রণ

এই ধরনের আচরণগত অবস্থাকে ট্যুরেট সিনড্রোম বলে। এটি একটি স্নায়বিক ব্যাধি। অস্থির অসংযত নড়াচড়া এবং কণ্ঠস্বর এই সিনড্রোমের লক্ষণ। ট্যুরেট মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের মধ্যে চারগুণ বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তা ছাড়া সাধারণত ৫ থেকে ৭ বছর বয়সের মধ্যে এটি দেখা দিতে পারে।

কিন্তু কিশোরীদের মধ্যে এখন যে সমস্যাটি প্রবল হচ্ছে সেটি কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিলছে না। তাহলে কেন হঠাৎ করে কিশোরীদের মধ্যে এমন উপসর্গ দেখা যাচ্ছে? এ প্রশ্নে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকটকের মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের ভূমিকা থাকতে পারে।

আরও দেখুন: Tecno Pova Neo 2 বাংলা রিভিউ

মহামারিকালে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন ভৌগোলিক অঞ্চলে পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যমে এ সংক্রান্ত উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন। তাঁরা দেখেছেন, সারা বিশ্বে কিশোরীদের মধ্যে একই ধরনের আচরণগত পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের পেডিয়াট্রিক নিউরোলজিস্ট মোহাম্মদ আলদোসারি বলেন, প্রাথমিকভাবে, তাঁরা ভেবেছিলেন এটা হয়তো বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সবাই এটি লক্ষ্য করছি। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অথবা হয়ত এক বা দুই দিনের মধ্যে, যেসব কিশোরীর টিকসের কোনো ইতিহাসই নেই, তারাও হঠাৎ করে অস্থির আচরণ করতে শুরু করে।

আরও পড়ুন: টিকটক ভিডিও ধারণ বন্ধে ১৬ বাস কোম্পানিকে নোটিশ

অনেক কিশোর-কিশোরী এই ধরনের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার কারণে স্কুলে ক্লাস থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার কথাও জানিয়েছে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, এই আকস্মিক উপসর্গগুলো সামগ্রিকভাবে গুরুতর এবং বারবার ঘটেছে। এমনকি প্রতি মিনিটে প্রায় ২৯ বার!

সমীক্ষায় দেখা গেছে, আকস্মিকভাবে টিকসের মতো আচরণগত বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পাওয়া কিশোর-কিশোরীরা একই ধরনের শব্দ চিৎকার করে বলে। তাদের অসংগতিপূর্ণ অঙ্গভঙ্গিগুলোও প্রায় একই রকম। তারা আপাতদৃষ্টিতে এলোমেলো শব্দ বা বাক্যাংশের পুনরাবৃত্তি করে। বারবার কসম খায়, অশ্লীল বাক্যাংশ বা শব্দ বলে। হাত বা বাহু নাড়ায়, তালি দেয় বা নির্দিষ্ট দিকে অযথা নির্দেশ করে। আবার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দিয়ে অন্য ব্যক্তি বা বস্তুকে আঘাত করার মতো আচরণও দেখা যায়।

আরও পড়ুন: একবছর নিরবচ্ছিন্ন ব্যবসা করতে চায় ইভ্যালি

শিকাগোর রাশ ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের মুভমেন্ট ডিসঅর্ডার ফেলো ক্যারোলিন অলভেরা ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে বলেন, তিনি দেখেছেন বহু রোগী থেকে থেকে ‘বিনস’ বলে চিৎকার করছে। লক্ষণীয় বিষয় হলো, ইংরেজি জানে না এমন রোগীও ব্রিটিশ উচ্চারণে ‘বিনস’ বলে চিৎকার করছিল। ক্যারোলিন পরে খোঁজ নিয়ে জানেন, একজন শীর্ষ ব্রিটিশ টিকটকার তাঁর ভিডিওতে ‘বিনস’ বলে হঠাৎ চিৎকার করেন।ফলে এটি যে ট্যুরেট সিনড্রোম নয় সে ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত হয়েছেন। কারণ ট্যুরেট সিনড্রোমে আক্রান্তদের আচরণ হয় স্বতন্ত্র।

আরও পড়ুন: বিনা অভিজ্ঞতায় ক্যারিয়ার গড়ুন ওয়ালটনে

এই ধরনের আচরণগত সমস্যার পেছনে বিশেষজ্ঞরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বড় ভূমিকা দেখছেন। বিশেষ করে টিকটক। তাঁরা বলছেন, একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, এই টিকস হচ্ছে মানসিক চাপ এবং উদ্বেগজনিত স্নায়বিক আন্দোলন। মহামারি এবং কিশোর-কিশোরীদের সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তির কারণে এই সমস্যা প্রবল হয়েছে। মস্তিষ্কের অপ্রতিরোধ্য চাপ থেকে মুক্তির একটি জটিল প্রক্রিয়া হলো এই অস্বাভাবিক আচরণ।

আরও পড়ুন: ইউটিউব থাম্বনেইল বানিয়ে আয় করুন

বিষণ্নতা এবং উদ্বেগপ্রবণ কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে এই সমস্যা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। আবার ছেলেদের তুলনায় কিশোরীদের বিষণ্নতা এবং উদ্বেগে ভোগার সম্ভাবনা বেশি থাকে। ফলে কিশোরীদের মধ্যেই টিকসের সমস্যা প্রবল।

ডা. আলদোসারি বলছেন, মেয়েদের মধ্যে উদ্বেগ বেশি প্রাধান্য পায়, মেয়েরা ইনফ্লুয়েন্সারদের মাধ্যমে বেশি প্রভাবিত হয়। তারা বেশি সংবেদনশীল। ফলে ভালো বা খারাপ উভয় কনটেন্টই তাদের ব্যাপকভাবে বদলে দিতে পারে।

বেশ কয়েকটি মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত এ সম্পর্কিত গবেষণা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রথম এমন প্রতিবেদন প্রকাশ করে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। ১০ থেকে ২০ মাস ব্যাপী কিশোর-কিশোরীদের আচরণ পর্যবেক্ষণ করে প্রতিবেদনগুলো প্রস্তুত করা হয়।

Leave a Reply